তোমাকে দেখি

শাহ জামাল উদ্দিন

কাছে থাকলেও তুমি থাকো দূরে
দূরে গেলে
ভালোবাসা পিছে পিছে ঘোরে ।

দুর্দশার দেয়াল টপকে
তোমাকে দেখি আজো আমি
বুকের ভেতর দুঃখ আছে কতখানি
জানে ধলেশ্বরি
তার আগেকার বসন্তের খবর নিয়েছি
সে এখন জীর্ন নদী
তোমার কথা তাকে কী করে বলি ।

দুর্দশার দেয়াল টপকে
তোমাকে দেখি আজো আমি ।

বুকের সীমানা

শাহ জামাল উদ্দিন

তুমি চলে যাবে ! কত দূরে যাবে ?
আমার বুকের সীমানা পার হতে পারবে ?
এক জীবনে !

নিজের ভেতরে নিজেই থাকি
আর তোমাকে রাখি
রাত জেগে দেখি ভোর হলে দেখি
বেলা অবেলায়
ঘুরে ঘুরে তোমাকেই দেখি ।

বুকের মধ্যে কখনো মরুভূমি
কখনো অন্তঃশীলা নদী
একা একা পার হতে পারবে না তুমি ।

পাতাগুলো ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়ে
আকাঙ্ক্ষার ভেতরে
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার বিপরীতে ।

তুমি চলে যাবে ! কত দূরে যাবে ?
আমার বুকের সীমানা পার হতে পারবে ?
এক জীবনে !

তোমার মুখে বাবা ডাক শুনে

শাহ জামাল উদ্দিন

যখন বাবা বলে ডাক তুমি,
আমি বনে যাই পৃথিবীর সেরা ধনী
ইচ্ছে করে-
দু' হাতে বিলাই তোমাকে খুশিতে
পৃথিবী আরো সুন্দর হয়ে যায় আমার দু' চোখে
তোমার মুখে বাবা ডাক শুনে ।

কত অভিমান কত অভিযোগ
চিৎকার করে মনের ভেতরে
তবু দু'ফোটা অশ্রু ঝরে পড়ে খুশিতে
ভালোবাসার নদীতে
তোমার মুখে বাবা ডাক শুনে ।

কখনো কখনো মনে হয় ডাকছেন
বাবা আমাকে
আদরে উল্লাসে কিছুটা গর্বের ভাব করে ।

মনে পড়ে যায় তোমাকে নিয়ে
দীর্ঘ রাত জাগা-
আমার হাত ধরে হাঁটা শেখা
বার বার পড়ে যাওয়া
তোমার ডুব সাঁতার দেখা
আমি চলে যাই
সেই আগেকার রাত্রিদিনে মনেমনে
তোমার মুখে বাবা ডাক শুনে ।

তোমার জন্যে

শাহ জামাল উদ্দিন

দুস্প্রাপ্য ব্যাধির (হজকিং লিম্ফোমা) হাত থেকে
ফিরিয়ে এনেছো আমাকে
অনেক যাতনা সয়ে তোমার অনল উদ্যানে
আমি শুধু বেঁচে থাকবো তোমার জন্যে
আশংকার কালো মেঘে চড়ে
যখন অনেকগুলো দুর্দশা
নেমে আসে আমার জীবনে
তখন তোমাকে দেখি ব্যক্তিগত জায়নামাজে
ছলছলানো জলের চোখে

তুমি সুসময় ডেকে আন আমার ভূবনে
আমার সবটুকু বেঁচে থাকা
তোমারই জন্যে
তোমার মধুর অন্তঃপুরে
জীবন আমার তাকায় আকাশ জুড়ে
সবটুকু ক্লান্তি মুছে

আমি যখন কষ্টে থাকি কত কী বিদ্যা শিখাও
আমাকে তুমি
আমি জায়নামাজে বসে বিধাতার পায়ে পড়ি
অল্পতে আমি সুখি হয়ে উঠি

বেঙ্গালুরের হোয়াইট ফিল্ডে
তামিলনাড়ুর ভেলরের কষ্টকর পথে
তুমি হেঁটেছ
আলো-অন্ধকারে আমার জন্যে

আমার একা থাকার অবসরে
অসুখে তোমাকে যখন দেখি পাশে
তখন চারিদিক থেকে আমার সু-সময় আসে
আমার সবটুকু বেঁচে থাকা তোমারই জন্যে ।

কবি পরিচিতি

BanglaKobita

শাহ জামাল উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামে। কিশোর বয়সে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর তিনি কুষ্টিয়া শহরে লেখাপড়া করেন।

১৯৭৭ সালে দিগনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ১ম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) পাশ করেন। প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতিপয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে ( হজকিং লিম্ফোমা) আক্রান্ত হলে চিকিৎসারত অবস্থায় চাকুরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে আল্লাহর অপার মহিমায় সুস্থ হয়ে ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। মূলত তিনি কবি। কবিতা লেখা তার পেশা নয়-নেশা। বর্তমানে তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন। “ স্বপ্নের সিঁড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা ” এবং “ ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী ” তার প্রকাশিত গ্রন্থ। এছাড়াও কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশের পথে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন এবং কতিপয় সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত

ফেসবুক পেইজ

কবিতা আবৃত্তি