শেষ দিন

শাহ জামাল উদ্দিন

ঐ দিন যদি একটা কুকুর আসতে চায়
আমার লাশের পাশে
আসতে দিও তাকে
গভীর রাতে একদিন ক্ষুদার্থ আমরা দুজনে
খাবার খেয়েছিলাম ভাগ করে ।

ভাঙা পায়ের সেই শালিকটি
যার কথা কবিতায় লিখেছি
বলেছিল সে আসবে মৃত্যুসংবাদ পেয়ে
আসতে দিও তাকে ।

প্রজাপতি ফড়িং আর সেই সব জোনাকি
যাদের আমার ভাবনার প্রাঙ্গণে রেখেছি
ওরা আসবে , আসতে দিও কাছে ।

শুধু তোমরা এসো না কাছে
তোমাদের প্রবঞ্চনার ঠান্ডা জলে কষ্ট পাবে সে ।

অল্প বয়সে

শাহ জামাল উদ্দিন

আমার মাকে তারা পাঠিয়ে দিয়েছিল অল্প বয়সে
সেইখানে যেখানে অনেক কাক থাকে
তারপর মা আমার কাকেদের ঠোকর খেত
আর কষ্ট করে ধান শুকাতো উঠোনে।

তার সেইসব ভয়ঙ্কর কষ্টগুলো সাথে করে
মাঝে মাঝে আসতো বাপের বাড়িতে মুখ নত করে
তারা ধনী হয়ে গিয়েছিল ততদিনে
তখন সেই বাড়ির সকলে
আমার মাকে দেখতো একচোখ দিয়ে
তারপর মা আমার বস্তা বস্তা অবহেলা বয়ে নিয়ে
ফিরে আসতো কাকেদের ঐখানে ।

অল্প বয়সে চলে গেলেন পৃথিবীর ছেড়ে অভিযোগ দিয়ে
মায়ের চলে যাওয়া টের পেয়ে
একটা বুনো শুয়োর জোগাড় করে তারা ছেড়ে দিয়েছিল আমাদের বাগানে
মা দুঃখ পেয়েছেন ঘুমের অন্ধকারে, এখন আমার মায়ের দুঃখগুলো খুঁজে পাবো কোনখানে ।

আমার মাকে তারা পাঠিয়ে দিয়েছিল
অল্প বয়সে সেইখানে যেখানে অনেক কাক থাকে
তারপর মা আমার কাকেদের ঠোকর খেত
আর কষ্ট করে ধান শুকাতো উঠোনে।

তাকে হারাই

শাহ জামাল উদ্দিন

আমি যাকে বুক ভরে পেতে চাই
তাকেই হারাই

সে আমার প্রেমিকা নয় তবুও কেন
এতো দুঃখ হয়
তার চীরদিনের চলে যাওয়ায়

"অলি বারবার ফিরে আসে,
অলি বারবার ফিরে য়ায়।"-
তার কন্ঠে শুনেছি কতবার
এ গান আজো আমি যখন শুনতে পাই
আমার অস্তিত্বের গভীরে বেদনার্ত সুর বাজে
নক্ষত্রের রূপালী রাতে

অনেক বছর পরে আমার চোখদুটো
দুরন্ত লাফিয়ে ওঠে
তাকে দেখার জন্য যখন সেই গান বাজে

আবার যদি ফিরে পাই তোমায়
ফুলের পাপড়ি গুছিয়ে দিতাম তোমার পায়
হে বন্ধু বিদায়!

আমার কষ্ট হয়

শাহ জামাল উদ্দিন

ভালোবাসার পুকুরে আমার পুরনো প্রেম
সোনালি রূপালি মাছের মত মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে
সেইসব সবুজ মেয়ে
কখনো দেখি তাদের বিবর্ন ধূসর ঘাসের মত
চেয়ে থাকে আকাশের দিকে ।

অন্ধ পাখির মত সেই কবে থেকে তারা আছে চোখ বন্ধ করে
একবারও তাকিয়ে দেখেনি আমাকে গোপন শুড়িপথে ।

এখনো সেই নামগুলো ঝলমল করে ভিজে অন্ধকারে
তবু টানটান নিমগ্নতায় ঘৃনা ছড়ায়
তাদের উদ্ধত মুখে আমার ভেতর থেকে ।

এড়ানো যায়না এ দুঃখকে
প্রতিদিন কত বেদনা জন্ম নেয় আমার বুকে
প্রকৃতির ভরা উৎসবে
যখন আমি ফিরে যাই অতিতের গ্রামে ।

কবি পরিচিতি

BanglaKobita

শাহ জামাল উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামে। কিশোর বয়সে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর তিনি কুষ্টিয়া শহরে লেখাপড়া করেন।

১৯৭৭ সালে দিগনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ১ম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) পাশ করেন। প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতিপয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে ( হজকিং লিম্ফোমা) আক্রান্ত হলে চিকিৎসারত অবস্থায় চাকুরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে আল্লাহর অপার মহিমায় সুস্থ হয়ে ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। মূলত তিনি কবি। কবিতা লেখা তার পেশা নয়-নেশা। বর্তমানে তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন। “ স্বপ্নের সিঁড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা ” এবং “ ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী ” তার প্রকাশিত গ্রন্থ। এছাড়াও কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশের পথে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন এবং কতিপয় সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত

ফেসবুক পেইজ

কবিতা আবৃত্তি