আগের মতোই আছো

শাহ জামাল উদ্দিন

তোমাকে কী বলি-
ফুলকুমারি, ভালোবাসার গোপন নদী ?

ঘুমের মধ্যে নিজে নিজে দেখি
তোমার নীমিলিত চোখ উন্মুক্ত ঠোঁট মোহনীয় চুল
ঠিক যেন আগের দিনের মতোই তুমি !

আজো অন্ধকারে লক্ষি পেঁঁচার আগমন
টের পেয়ে আনন্দ পাও
চুলে ক্লিপ পড়ে হাসি দিয়ে দরজা যখন খুলে দাও
তখন চেহারায় তোমার আমার
ছোট্ট বেলার সবুজ গ্রাম দেখি
দেখি বাগানের লতা-পাতা কাদা মাটি
উঠোনের দ্বিধাহীন অল্পবয়সী ডালিম গাছটির মতই
আজো তোমাকে দেখি।

যখন ক্লান্ত মানুষ আমি-
বিপন্ন বারান্দায় মাথানিচু করে বসে থাকি
তখন তুমি জানালার ধারে
চাঁদের আলোতে বসে থাকা একগুচ্ছ উৎফুল্ল নারী
এখনো তুমি যেন সেই পৌষ পাখি
মাঝে মাঝে চোখ তুলে শুধু তোমাকেই দেখি
তোমাকে কী বলি ?

কিছু নাম

শাহ জামাল উদ্দিন

কিছু নাম মনে পড়ে হাজার নামের ভীড়ে
ওরা আমার কবিতা পড়ে-
যেন অপেক্ষায় থাকে
একে ভালোলাগা বলে
একদিন তাদের ভালোবাসা হয়ে যাবে
আমার কবিতার সাথে।

ভোরের কনকচাঁপা হাতে-
তাদের কাছে যাবো আমি শুভেচ্ছা নিয়ে
যদি পৌঁছানোর আগে আমার পা দুটো ভেঙে না পড়ে।

যাবার আগে সকলের সৌরভ নিয়ে যাবো বুক ভরে
যারা আমার কবিতা পড়ে
কিছু নাম মনে পড়ে হাজার নামের ভীড়ে।

হলদে পাখি

শাহ জামাল উদ্দিন

যে পাখির পিঠে চড়ে
অন্ধকার নদী পার হয়ে
সূর্যের গোলাপী আলোতে গিয়েছি
সাগর সৈকতে উদ্বেলিত ঢেউয়ের
ছোঁয়ায় মেতেছি ।
অনেক বেদনা ঝরে গেছে
যে পাখির পিঠে চড়ে
ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত অন্ধকারে
আজ তার ডানা ভেঙ্গে গেছে
বেদনার ঝড়ে ।
নিরাভরণ নিরুত্তর পাখিটি আমার
ক্লান্তিহীন বেদনায় ডুবে গেছে
অথচ নদীর মত কত সৌন্দর্য
তার জীবনের বাঁকে বাঁকে
তবু সে কষ্টে থাকে ।
রাতের পেঁচারা
কুটিল সন্দেহ ছড়িয়ে দিয়েছে
বাতাসে - ভাটিতে
পাখিটি এখন লজ্জায় নিজেকে
লুকিয়ে রাখে ।

ভালোবাসি তোমাকেই

শাহ জামাল উদ্দিন

তোমাকে ব্যাক্তিগত সামগ্রী মনে করি না আমি
জীবনের বহুকাল দিয়েছো পাড়ি
সোনারূপা নেই লিপিষ্টিক নেই ভেনেটি ব্যাগে
সাজসজ্জার সরঞ্জামাদী নেই
টিনের চালার ঘরবাড়ি তারই ফুটো দিয়ে
পড়েছে অজস্র বৃষ্টির পানি
তোমার মত ভেঁজা ফুল আমি আজও দেখিনি
তোমার নিজস্ব শোবার ঘর নেই
জানালায় পর্দা নেই শিমুল তুলোর
নরম বালিশ নেই
তবু তোমার ক্লান্তি নেই
তোমার না পাওয়ার বেদনা নেই
তোমাকে আমার না ছোঁয়ার অভিমান নেই
তোমার চোখের মত দূর্লভ চোখ
আর কোথাও নেই
কত শান্ত রাত তোমার বৃথা গেল
হাজারো গোলাপ ফুলদানিতে নষ্ট হলো
তবুও তুমি আজো আমার পায়ের আওয়াজ
বাতাসে কান পেতে শোন
ইচ্ছে হলেই খুঁজে পাই তোমার হাত দুটো
ভেতরে মুক্তো সাজিয়ে রেখেছ কত
ঝিনুকের মত
শুধুই তোমাকে ভালোবাসি আজো।

কবি পরিচিতি

BanglaKobita

শাহ জামাল উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামে। কিশোর বয়সে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর তিনি কুষ্টিয়া শহরে লেখাপড়া করেন।

১৯৭৭ সালে দিগনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ১ম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) পাশ করেন। প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতিপয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে ( হজকিং লিম্ফোমা) আক্রান্ত হলে চিকিৎসারত অবস্থায় চাকুরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে আল্লাহর অপার মহিমায় সুস্থ হয়ে ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। মূলত তিনি কবি। কবিতা লেখা তার পেশা নয়-নেশা। বর্তমানে তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন। “ স্বপ্নের সিঁড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা ” এবং “ ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী ” তার প্রকাশিত গ্রন্থ। এছাড়াও কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশের পথে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন এবং কতিপয় সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত

ফেসবুক পেইজ

কবিতা আবৃত্তি