গরীবের ছেলে

শাহ জামাল উদ্দিন

ছোটবেলা থেকে তথাকথিত আপন আত্মীয়েরা
তাকে ভাবতো গরীবের ছেলে ডাকতো অবহেলা করে ।

বাপটা তার নরম মাটির মত
শুধু আল্লাহর কাছে চাইতো
টাকাকড়ি পায় নাই কিছু শেষ পর্যন্ত
চাচারা ছিল যেন লর্ডক্লাইভের বংশগত
আর তাদের সন্তানেরা এখন একএকটা মস্তবড় দুর্বৃত্ত ।

তার মামারা অনেক ধনী -
জাহাজ বেচাকেনা করে শুনেছি
কেউ কেউ করে বাটপাড়ি
একচোখ দিয়ে দেখতো তার নানী
কসাই নানাজান তার মাকে
চৌদ্দ বছরে দিয়েছিলেন বিয়ে গরীব সম্ভ্রান্ত বংশ দেখে এক ছটাক সম্পত্তি দেন নাই মেয়েকে ।

মা তার মরে গেলেন অনেক কষ্টে অল্প বয়সে
ভিখারীর মত কিছু চাইতে গেলে
মামাগুলো চালাক শিয়ালের মত ঢুকে যেত গর্তে
ঘোষেটি বেগম খালারা দাঁড়াতো সামনে এসে
বাধা দিতে।

অল্পকিছু পাপ করে যতটুকু পেয়েছিল সে
ভালোবাসার নামে ছোট ছোট অনাথ ভাই- বোনদের দিয়েছে বিলিয়ে ।

যদি সে করতো আরো কিছু পাপ
উপরে উঠে যেত বাটপারির আরো কয়েকটা ধাপ
তখন সন্তানেরা বলতো না তাকে আমাদের গরীব বাপ ।

শরীর জুড়ে

শাহ জামাল উদ্দিন

এত মায়া কেন আমার ভেতরে
ভালোবাসার অস্থির প্রজাপতির মত বারবার
ডানা ঝাপটায় বুকে ।

এত হট্টগোল এত গন্ডোগোল
আমার সমস্ত শরির জুড়ে
তবুও ভালোবাসার ইচ্ছেটা বেদনার ঝড় তুলে বুকে ।

শৈশব যৌবন হারালাম
যে ভুল করে
আবারো সেই ভুল করি বার্ধক্যের পথে পথে
ভালোবাসতে ইচ্ছে করে
কি যাতনা আছে এই মনে !

এত মায়া কেন আমার ভেতরে-
ভালোবাসতে ইচ্ছে করে নিজেকে অসম্পূর্ণ রেখে
কান্না এসে নিভিয়ে দেয়
আমার ভেতরে যে আগুন জ্বলে ।

অল্প দাম

শাহ জামাল উদ্দিন

জীবনটাকে দিলাম বেচে অল্পদামে
যেচে যেচে পরের খবর নিতে নিতে গিয়ে
মূল্য আমার কমে গেছে
ভেবেছিলাম অনেক মূল্য পাবো আমি শেষের হাটে
জীবনটাকে দিলাম বেচে অল্প দামে ।

পথ হারিয়ে কাঁদছি আমি বৃক্ষ তলায়
কেউ কি এখন আমার দিকে ফিরে তাকায়
যাদের নিয়ে ডুবে ছিলাম নিমগ্নতায়
ভালোবাসার পোশাক খুলে তারা শুধু উল্টো তাকায় ।

সেই লোকেরা এখন যখন এই পৃথিবীর ঝরনাতলায়
আমি তখন পড়ে থাকি নিঃসঙ্গতার নষ্ট নালায় ।

জীবনটাকে দিলাম বেচে অল্পদামে
পরের খবর নিতে নিতে যেচে যেচে
মূল্য আমার কমে গেছে ।

মাইগ্রেন্ট

শাহ জামাল উদ্দিন

তোমাদের কাছে এসেছিলাম
সাইবেরিয়া থেকে পাঞ্জাব হয়ে
উষ্ণতা পোহাতে শীতের সকালে ।

মনকাড়া সৌন্দর্য্য আর সুন্দর মন
ছিল আমার আপনজন
ভালোবাসা বিলাবো
তোমাদের সুরে সুর মিলাবো
হতে চেয়েছিলাম তোমাদেরই প্রিয়জন ।

তোমাদের এখানে হিংসার দারুন নখের আঁচড়ে
ভেতরে রক্ত ঝরায়
প্রেম বদলে যায় স্বার্থের নিপুণ ভুমিকায় ।

আমি যাব ফিরে নিজেদের নীড়ে
সব ব্যথা ভুলে
নিঃশব্দে রাতের দরজা খুলে ।

কবি পরিচিতি

BanglaKobita

শাহ জামাল উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামে। কিশোর বয়সে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর তিনি কুষ্টিয়া শহরে লেখাপড়া করেন।

১৯৭৭ সালে দিগনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ১ম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) পাশ করেন। প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতিপয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে ( হজকিং লিম্ফোমা) আক্রান্ত হলে চিকিৎসারত অবস্থায় চাকুরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে আল্লাহর অপার মহিমায় সুস্থ হয়ে ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। মূলত তিনি কবি। কবিতা লেখা তার পেশা নয়-নেশা। বর্তমানে তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন। “ স্বপ্নের সিঁড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা ” এবং “ ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী ” তার প্রকাশিত গ্রন্থ। এছাড়াও কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশের পথে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন এবং কতিপয় সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত

ফেসবুক পেইজ

কবিতা আবৃত্তি