কলো মেয়ে

শাহ জামাল উদ্দিন

লালপেড়ে হলুদ শাড়ি প্রতিটি বসন্তে যেন পাই
কালো কালো চোখ মেলে
আমাকে কালো মেয়ে বলেছিল তাই ।

হলদেবউ পাখির মত ঘুরে বেড়াতো নীড় থেকে নীড়ে
ফসলের মাঠে
লাল পেড়ে হলুদ শাড়ি
আজো কি আছে তার মন জুড়ে !

তার বিষন্ন মন ক্লান্ত জীবন পেঁচানো শড়ির আচঁল
অবাধ্য কষ্টের মতন ।

একদিন ডুবে গেল সে নির্জনতার কালো জলে
তাকে আর দেখা যায় না ঝাউ বনে
অথবা দেবদারু গাছের আড়ালে-কালো মেয়ে ।

তুমি গেলে চলে

শাহ জামাল উদ্দিন

তুমি গেলে চলে আমি দেখলাম-
রমণীর হাতের শাখার চেয়েও সুন্দর তোমার শরীর
সিঁথির সিঁদুরের চেয়ে লাল ব্যাথাতুর চোখ ।

ঘরে ফিরে দেখি অন্ধকার সকাল
দুপুর , বিকেল কত নিষ্ঠুর -রাত্রী বিভীষিকাময় ।

রাতে বাচ্চাটা ঘুমিয়ে যাবে অভিমানে
ভাঙ্গবে না ঘুম আমার তোমার পায়ের শব্দে ।

আগামীকাল যাওয়া হবে না নদী পাড়ে
বাচ্চাটাকে সাথে নিয়ে ।

তুমি গেলে চলে আমি দেখলাম-
রমণীর হাতের শাখার চেয়েও সুন্দর তোমার শরীর
সিঁথির সিঁদুরের চেয়ে লাল ব্যাথাতুর চোখ ।

এক রাতে

শাহ জামাল উদ্দিন

বেদনার ঝড়ে বিধ্বস্ত নারী এক
মুখ গুঁজে আছে নরম বালিশে
কখনো তাকায় ম্লান চোখে
লোনা ধরা দেয়ালের পালিশে
তার সহজ মন ঝিনুকের মত
পড়ে রয় বিছানায় ।

আরো কিছু রাত বাকি
আমি জেগে জেগে তাকে দেখি
তার সাদা দুটো হাত নিজেকে রেখেছে ঢেকে
প্রেমের দিন কি শেষ হয়ে গেছে - পৃথিবী তামাশা করে !

ভোরের পাখিদের ডাক শুনে
ম্লান চোখে বলে সে ,
আমাকে রেখেছ কেন অন্ধকারে ।

বেদনার ঝড়ে বিধ্বস্ত নারী এক
মুখ গুঁজে আছে নরম বালিশে
কখনো তাকায় ম্লান চোখে
লোনা ধরা দেয়ালের পালিশে
তার সহজ মন
ঝিনুকের মত পড়ে রয় বিছানায় ।

জানি তুমি আসবে না

শাহ জামাল উদ্দিন

সময়ের কুয়াশায় ঢেকে গিয়েছি
চিনতে পারবে না তুমি
তোমাকে পাবার জন্য তিরিশ বছর হেঁটেছি
তোমার যা কিছু ঋণ
ফেরৎ দিবো বলে ভেজা চিৎকারে ডেকেছি
তোমার পায়ের আওয়াজ শুনবো বলে
কান পেতে রেখেছি ।

লুকিয়ে রেখেছো তোমাকে
অনন্ত নির্জনতায় নির্মম দুঃখময়তায়।

জীবন আমার পিছনফিরে তাকায়
সময়ের কুয়াশার ভেতর দিয়ে হেটে চলা
আর বদলে যাওয়া নিজেকে মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলা
এইতো জীবনের খেলা ।

তোমাকে ছাড়া চারিদিকে শুণ্যতা
এখন শুধু খোলা জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকা
আর অপেক্ষায় থাকা
নিদারুন বেদনায় ঢলে পড়া
যেন একা একা কবরের কাছে হেঁটে যাওয়া
আমি জানি তুমি আর কখনো আসবে না ।

কবি পরিচিতি

BanglaKobita

শাহ জামাল উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামে। কিশোর বয়সে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর তিনি কুষ্টিয়া শহরে লেখাপড়া করেন।

১৯৭৭ সালে দিগনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ১ম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) পাশ করেন। প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতিপয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে ( হজকিং লিম্ফোমা) আক্রান্ত হলে চিকিৎসারত অবস্থায় চাকুরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে আল্লাহর অপার মহিমায় সুস্থ হয়ে ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। মূলত তিনি কবি। কবিতা লেখা তার পেশা নয়-নেশা। বর্তমানে তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন। “ স্বপ্নের সিঁড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা ” এবং “ ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী ” তার প্রকাশিত গ্রন্থ। এছাড়াও কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশের পথে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন এবং কতিপয় সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত

ফেসবুক পেইজ

কবিতা আবৃত্তি