অবহেলা

শাহ জামাল উদ্দিন

এখন অলস দুপুরে বিষন্ন সকালে
কষ্ট করে ব্যস্ত রাখি নিজেকে
আর ভয়ানক শুন্যতার মধ্যে সবকিছু আগলে রাখার
চেষ্টা করি অলখে
কেটে গেলো একটা বিভোর জীবন
বিয়োগান্ত নাটকের অন্তিম সংলাপের মধ্যে দিয়ে।

অথচ একটা সময় ছিল যখন চোখ পড়তো
তাদের শরিরে
অবহেলা করেছিল আমাকে
এখন তারা তাদের বুড়ো শরির নিয়ে
কী বিষন্ন তাকায় এদিকওদিক।

শীত বসন্ত বর্ষায়
যাওয়াআসা করে স্মৃতির মধ্যে
তারা সেই আগেকার মত নেই
উত্তাল কিশোরীগুলো এখন কী বিভৎস
সুন্দরী সাজে
পুরনো দিনের সেই ইতিহাস হাতে করে
দাঁড়িয়ে থাকে দুপুরের রোদে
আমি শুধু কবিতা লিখি টেবিলে ঝুঁকে ।

একা থাকা

শাহ জামাল উদ্দিন

বুকের সমুদ্রে
বেদনা ঢেউ তোলে উত্তাল
শরির থেকে ঝরে পড়ে স্মৃতির একরোখা জল ।

কষ্টের কাঁটা বিঁধে পায় পায়
যন্ত্রনার ধুলাবালি সারাদিন মাখে গায় ।

নিরবতার গ্লাস ভাঙে
হাত থেকে পড়ে ব্যস্ত রান্না ঘরে
শুকনো রুটি পড়ে থাকে খাবার টেবিলে ।

হৃদয়ের দরজা বন্ধ করে
মাঝে মাঝে আশ্বিনের পূর্নিমা
ডেকে আনি মনের পর্দা ছিড়ে ।

জমাট বাঁধা অন্ধকারে
অপরিসর নির্জন প্রান্তে
একা থাকি এইখানে ।

তবুও ঘন্টা বাজে

শাহ জামাল উদ্দিন

অহংকারে ভরা যৌবন অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলে
আমার নিরাবতার ভরা গ্লাস ভেঙে

তবুও তোমার নামের ঘন্টা বাজে সাতাশ বছর ধরে
এখানে ওখানে ট্রেনে বাসে লঞ্চে

শেষ দেখা হয়েছিল সেই কবে - মনে পড়ে ?
তোমার অবহেলা
আমার রক্তের সরু গলি ভেদ করে
পৌঁছে গিয়েছিল হৃদয়ে

তুমি ছিলে হরিন পায়ে হেটে চলা লম্বা নদী
তোমার হাসিতে
আমার ভেতরে জন্মাতো বনভূমী

তোমার কি এখন দিন কাটে
বসন্তের করুন বেহালা শুনে শুনে
আঁধার- গ্রাস- করা চোখে
এখনো কি চেয়ে দেখো তুমি কে যায় কে আসে ?

অহংকারে ভরা যৌবন অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলে
আমার নিরাবতার ভরা গ্লাস ভেঙে
তবুও তোমার নামের ঘন্টা বাজে সাতাশ বছর ধরে !

ভালোবাসা হয় নাই কখনো

শাহ জামাল উদ্দিন

ভালোবাসায় নিস্ফল হয়েছি চীরদিন-
বড় দুঃসময় ছিল সেইসব দিন
লজ্জায় কারো কাছে হাতপেতে চাইনি ফুল
শূন্যহাত ছিল বিষন্ন ব্যাকুল ।

যৌবন ছিল ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের মতন-
উদাসীন কৃষ্ণচূড়ার মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
দেখতাম শুধু ক্রন্দন
আমি ছিলাম নিরুত্তর নিরাভরন ।

এখন ভালোবাসতে চাইলে -
ঢুকে পড়ে তারা উপেক্ষার চোরা গলির ভিতরে
কৌতূহলী চোখে চেয়ে থাকে অনেক্ষন ।

আমি দুরে দুরে থাকি-
পর্যাটক পাখিদের ছবি আঁকি
তাদের গভীর চোখের শিল্পকলা দেখি ।

ভালোবাসার জন্য আর কোনদিন-
বসা হবে না কারো মুখো- মুখি
এমনি করেই ফুরিয়ে যাবে আমার দিনরাত্রি ।

কবি পরিচিতি

BanglaKobita

শাহ জামাল উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামে। কিশোর বয়সে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর তিনি কুষ্টিয়া শহরে লেখাপড়া করেন।

১৯৭৭ সালে দিগনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ১ম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) পাশ করেন। প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতিপয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে ( হজকিং লিম্ফোমা) আক্রান্ত হলে চিকিৎসারত অবস্থায় চাকুরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে আল্লাহর অপার মহিমায় সুস্থ হয়ে ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। মূলত তিনি কবি। কবিতা লেখা তার পেশা নয়-নেশা। বর্তমানে তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন। “ স্বপ্নের সিঁড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা ” এবং “ ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী ” তার প্রকাশিত গ্রন্থ। এছাড়াও কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশের পথে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন এবং কতিপয় সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত

ফেসবুক পেইজ

কবিতা আবৃত্তি