সেই মেয়ে চোখ রাখে

শাহ জামাল উদ্দিন

এখনো মনে হয় আকাশের শূন্যতায়
অতলের বেদনায়
আজো সে চোখ রাখে আমার জানালায় ।

নারীদের ভীড় থেকে ডাকতো সে আমাকে
আলো ছড়াতো যে তার ব্যাস্ত চোখে
আমার জীবনের সরুপথে ।

সেই চোখ বন্ধ করে কোথায় যে গেছে চলে
সেই মেয়ে
জীবনের ঝলসানো রঙ দেখে ।

নিবিড় বৃষ্টিতে অথবা বেদনার গহন প্রান্তরে
কখনো কখনো দেখা যায় তাকে
ললাটে আমার কবিতার টিঁপ আছে
অথচ ভালোবাসার ঠোঁট দুটি তার বদলে গেছে ।

এখনো মনে হয় আকাশের শূন্যতায়
অতলের বেদনায়
আজো সে চোখ রাখে আমার জানালায় ।

হানাহানি

শাহ জামাল উদ্দিন

জীবন আমার শুকিয়ে গেছে সময়ের পাথর
কেটে কেটে
অনেক ভীরু এই ঝরা পাতায়
তবু কে আগুন ধরায় !

এড়ানো যায় না এ দুঃখকে
তুমিও বদলে গেলে এত দিনে খুব কাছ থেকে
আজ দেখলাম
কুয়াশার অন্ধকারে পুরনো জাহাজের মত
ভেসে যাচ্ছ তুমি জীবনের অথৈই সাগরে।

ঘুমের অন্ধকারে অনেক ডেকেছি তোমাকে
নীবিড় অপেক্ষায় ছিলাম
তারাদের নীল রাত্রিতে ।

প্রেমের রঙ ফিকে হয়ে গেছে
অবশেষে তুমি এলে নিজেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
জীবনের সব প্রয়োজন অন্যকে দিয়ে
আমার দুঃখময় জানালায় এসে দাড়ালে ।

আমার জীবন আর মৃত্যুর হানাহানি
মিটাতে পারবে কি তুমি
তাহলে চলে এসো এসো দুপুরের ট্রেনে
শীতের স্তব্ধতা নেমে আসার আগে।

জীবন আমার শুকিয়ে গেছে
সময়ের পাথর কেটে কেটে
অনেক ভীরু এই ঝরা পাতায়
তবু কে আগুন ধরায় !

খুঁজে দেখা

শাহ জামাল উদ্দিন

পুরনো তোমার নাম
বারবার ভূল উচ্চারণ করলাম

দেবদারুকে জিজ্ঞেস করলাম _
সে বলল _"আমি জানি তার নাম,
কখনো কখনো আমাদের এইখানে তাকে দেখতাম,
বলতো সে তোমার নাম।"

না পেয়ে তোমাকে নিয়ে যেত ডাল ভেঙে
ব্যথা পেত ব্যথা দিত
কতবার রেখে গেছে
শালিকের কাছে কত প্র‍েম পত্র।

ফিরে ফিরে এসেছে সে আমার পাতার কাছে
বুকের বেদনা নিয়ে।

দেবদারুকে বললাম _ "এবার বলতো তার নাম,
আর আমি ঠিকানা যদি জানতাম। "

উত্তরে বললো _ " ঠিকানা তো দেয়নি সে,
শুধু নাম লিখে রেখে গেছে আমার বুকে। "

পুরনো তোমার নাম
বারবার ভূল উচ্চারণ করলাম।

তুমি এখন শুধুই ছায়ামূর্তি

শাহ জামাল উদ্দিন

বহুদিন মনে পড়ে নাই তোমাকে
আজ কেন তবে
তোমার হাতচিঠিটা খুলে দেখি বারে বারে

কোনদিন কোন কথা বল নাই-
তোমার বোবা দৃষ্টির ছায়ামূর্তি
মাঝে মাঝে আমার সামনে অবিরল নাচে ।

সূর্যদয়ে দেখেছিলাম যাকে -
সূর্যাস্তে মনে পড়ে তাকে বারে বারে
মাঝখানের সময়টা কেটে গেল
জঙ্গলে পাহাড়ে হামাগুড়ি দিয়ে।

শেষ দেখা হয়েছিল লঞ্চের ডেকে
এখনো সেখানে আমার ছায়া লেপটে আছে
নির্জনতা ভেদ করে
হয়তো তাকিয়ে থাকে তোমার পথের দিকে ।

কবি পরিচিতি

BanglaKobita

শাহ জামাল উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামে। কিশোর বয়সে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর তিনি কুষ্টিয়া শহরে লেখাপড়া করেন।

১৯৭৭ সালে দিগনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ১ম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) পাশ করেন। প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতিপয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে ( হজকিং লিম্ফোমা) আক্রান্ত হলে চিকিৎসারত অবস্থায় চাকুরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে আল্লাহর অপার মহিমায় সুস্থ হয়ে ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। মূলত তিনি কবি। কবিতা লেখা তার পেশা নয়-নেশা। বর্তমানে তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন। “ স্বপ্নের সিঁড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা ” এবং “ ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী ” তার প্রকাশিত গ্রন্থ। এছাড়াও কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশের পথে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন এবং কতিপয় সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত

ফেসবুক পেইজ

কবিতা আবৃত্তি