শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখতে ইচ্ছে করে

শাহ জামাল উদ্দিন

আর একটু দেখেশুনে আর একটু দেড়ি করে
তারপর না হয় চলে যেতে ।

আবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত
দেখতে ইচ্ছে করে তোমাকে
একদিন বৃষ্টিভেজা সেই দিনের মত
সিঁদুর কৌঁটা হাতে আয়নায় দাঁড়ানো
উঠোনে বসে চুল বাঁধার ছল করে
আঁড় চোখে তাকানো
সেই দিনের সেই বরই কুড়ানো ভুলি নাই এখনো ।

তারপর একদিন ভীষন রাগী হয়ে তুমি চলে গেলে
চিরকালের জন্য আমাকে দোষ দিয়ে ।

এতসব চিৎকার চেচামেচি অসম্ভব ক্লান্তি
নিশ্চল ছায়ার সাথে এতদিন খেলেছি কানামাছি ।

কিছুদিন হেঁটেছি পরস্পর পাশাপাশি
কিছুদিন স্বপ্ন দেখেছি তুমি আমি
ইঙ্গিতে- ইশারায় ছু্য়েছি তোমায় শীতল স্নিগ্ধতায় ।

আর একটু দেখেশুনে আর একটু দেড়ি করে
তারপর না হয় চলে যেতে।

কাকাতুয়া

শাহ জামাল উদ্দিন

আমার লালঝুটি কাকাতুয়া পাখিটি
সেই কবে থেকে বসে আছে আমার পথ চেয়ে ।

বেশি কিছু চায়নি সে-
চুলের কালো ফিতে কাঁচের চুড়ি দুই হাতে
লালটিপ কপালে
এখনো পারি নাই দিতে ।

আমি বলতে পারিনা তাকে -
সেই যে অভিশাপের কালো সাপ
বর্বর লোলুপ হাসিতে
পেঁচিয়ে রেখেছে আমাকে
বিদ্বেষে আমার ফুরফুরে স্বপ্নগুলি গিলে ফেলে ।

আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম হিংস্রতা থেকে বহুদূরে
নির্জন নগরে তাকে নিয়ে অবশেষে ।

আমার লালঝুটি কাকাতুয়া পাখিটি
সেই কবে থেকে বসে আছে আমার পথ চেয়ে ।

মরে যাবো অনায়াসে

শাহ জামাল উদ্দিন

দ্বীধাহীন পর্দার ওপাশে কখনো একলা পাইনি তোমাকে
নিজের কোন শোবার ঘরে
খোলা জানালার পাশে ।

তোমার আমার ঘরহীন কাটলো ত্রিশ বছর
অল্পকিছু পাপ করে যতটুকু পেয়েছি
তাই দিয়ে তোমার কোন কষ্ট ঢাকতে পারিনি ।

আমার কাতর ইচ্ছে ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে
অন্যমনস্ক তোমাক দেখে
আটকে গিয়েছিলাম পৃথিবীর সব নষ্টদের ফাঁদে ।

একটা ঘর দিয়ে যাবো তোমাকে
ইচ্ছে আছে বুক জুড়ে
একাকী বসন্ত বাতাস আসবে তোমার কাছে
সেই ঘরে
আমি থাকবো দূর অন্ধকারে শেওলাপড়া
এই শরির নিয়ে ।

দ্বীধাহীন পর্দার ওপাশে-
কোনদিন তোমাকে একলা না পাওয়ার কষ্টে
মরে যাবো অনয়াসে ।

পুরনো বন্ধু

শাহ জামাল উদ্দিন

সেই সব বন্ধুরা চলে গেছে দূরে
যারা ঝাঁপ দিত বুকে পিঠে আনন্দে উৎসবে
এখনো তারা জরাজীর্ন হয়ে রয়ে গেছে স্মৃতিতে ।

সুবিধাবাদী বন্ধুরা চলে গেছে
আমাকে ফেলে একরাশ অন্ধকারে
আমি আজ ভুল স্টেশনে দাড়িয়ে
ওদের কথা মনে পড়ে বারে বারে
আকরাম সমীর উৎপল
অমল স্বপন ইউনুস ছিল বন্ধু এই কজন
আমি বুঝতে পারিনি ওরা বন্ধু হবে না কোনদিন
আমার পিছে পিছে ঘুরতো যদিও সারাদিন ।

বন্ধু ছিল একটি মেয়ে-
ভরা চাঁদে অথরা হেমন্তের নদীতে ডুব দিলে
এখনো দেখি তাকে মাঝে মাঝে
মুখ লুকায় সে আমার বুকে এসে ।

ইচ্ছে করে আবার তাদের জড়িয়ে ধরি আলিঙ্গন করি
মাঝে মাঝে হয়ে উঠি অভিমানি ।

কেন যে আজো পুরোনো বন্ধুদের খুঁজি অনবরত
পাখিদের মত !

কবি পরিচিতি

BanglaKobita

শাহ জামাল উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামে। কিশোর বয়সে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর তিনি কুষ্টিয়া শহরে লেখাপড়া করেন।

১৯৭৭ সালে দিগনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ১ম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) পাশ করেন। প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতিপয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে ( হজকিং লিম্ফোমা) আক্রান্ত হলে চিকিৎসারত অবস্থায় চাকুরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে আল্লাহর অপার মহিমায় সুস্থ হয়ে ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। মূলত তিনি কবি। কবিতা লেখা তার পেশা নয়-নেশা। বর্তমানে তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন। “ স্বপ্নের সিঁড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা ” এবং “ ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী ” তার প্রকাশিত গ্রন্থ। এছাড়াও কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশের পথে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন এবং কতিপয় সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত

ফেসবুক পেইজ

কবিতা আবৃত্তি