আমাদের গ্রাম (দিগনগরকে)

শাহ জামাল উদ্দিন

কত গোধূলী বেলা হারিয়েছি যেই গ্রামে
যেখানে মায়ের আদর
এসেছি ফেলে এক টুকরো সোনালি রোদে
বিষাদে জড়ানো আমার আত্মা
আজো ঘুরে বেড়ায় আঁকা বাঁকা সেই পথে
ঘাস মাটি আর বাতাস
আমার অনুপস্থিতি টের পায় সেখানে ।

মনে হয় হালকা শরিরের কোন এক প্রেয়সী
আমাকে ডাকে
লম্বা তার দুই চোখে সেই যে সবুজ মেয়ে ।

শীতের সকালে মায়ের রান্নার আগুনের আঁচ
আমার শরীরে আজো আছে লেগে
দেখি চোখ বন্ধ করে বাবা যায় মসজিদে
আরো যারা ছিল ঐখানে
মাটির গভীর থেকে উঠে এসে দেখে
আমি নেই সেখানে ।

অনেকের মধ্য থেকে
পুরনো গাছগুলো চিনতে পারে আমাকে
যখন যাই আমাদের গ্রামে
উঠনের ডালিম গাছটা নালিশ জানায়
এতদিন আসোনি কেন এখানে ।

নাচুনি ( রশ্মিকে )

শাহ জামাল উদ্দিন

তোমরা দেখ চুপচাপ দেখ
নাচুনির নাচ দেখ পায়ের কারুকাজ দেখ
তার হাঁটা দেখ একফালি চাঁদ দেখ হাসির ঝলক দেখ ।

প্রজাপতির পাখা হয় নিজে নিজে পাখি হয়
তুখোড় নাচ দেখায় অবাক চঞ্চলতায়
পায়ের সাথে হাত মেলায় নৃত্য -পাগল হয়ে যায়
প্রতিদিন নাচ দেখায়
আমার নানাভাই ভীষন মায়াময় ।

যখন সে নাচ দেখায় শান্তির পাখা নাড়ায়
আমাদের ঘরখানা
আনন্দে ভরে যায় কানায় কানায়
বাড়িঘর আলো দেয় নাচুনি নাচ দেখায় ।

কখনো সে মনে মনে ডাক দিলে
নাচুনির নাচ আমি দেখে যাবো গোপনে গোপনে ।

তোমরা দেখ চুপচাপ দেখ
নাচুনির নাচ দেখ পায়ের কারুকাজ দেখ
তার হাঁটা দেখ একফালি চাঁদ দেখ হাসির ঝলক দেখ ।

নানা ভাই (রাফাতকে)

শাহ জামাল উদ্দিন

নানা বলে ডাকো যখন আমায় তুমি
সবুজ ঘাসে ডিগবাজি খায় আমার খুশি
আমি তখন দেখতে থাকি রঙবেরঙের অনেক পাখি

গোলাপ কুঁড়ির মতোই তোমায়
আমার বুকে লুকিয়ে রাখি
যখন আমি দূরে থাকি
চুপেচুপে দুচোখ খুলে পরান ভরে তোমায় দেখি
মনে মনে ঘোড়া হয়ে তোমায় নিয়ে খেলতে থাকি

মন ভরে দেয় তোমার খুশি তোমার হাসি
তখন আমি খোলা হাওয়ায় বসে থাকি

তোমার কাছে আমার অনেক ঋন আছে
দুঃখ ভোলার অনেকগুলি দিন আছে

যখন আমি খালি ঘরে একলা থাকি
তখন তুমি আমার চড়ুই পাখি

তখন তুমি আমার অন্ধকারের জোনাকি
আমার চর্তুরদিকে আনন্দ ছড়াও একলা তুমি।

তৃতীয় প্রজন্ম (আর্জিসকে)

শাহ জামাল উদ্দিন

হেমন্তের এই রোদে এক চেনা মুখ দেখি
প্রতীক্ষায় আছি আমার প্রজন্ম তুমি।

অনেক শতাব্দী পার করে তুমি এলে তারপরে
এখানে কাদা-মাটি, চোরাবালি, ঝড়-বৃষ্টি
শান্তির চেয়ে হাহাকার বেশী।

এখনে রাতের চিৎকারে ঘুম ভাঙে
যেতে হয় পারিবারিক বনবাসে।

আমি আশাবাদ নিয়ে যাব এই পৃথিবী থেকে
পূর্বসূ্রী উত্তরসূরীদের ক্ষত শুকাবে
তোমার শুভ ইঙ্গিতে
তুমি আসবে এই অঙ্গীকার নিয়ে ।

হে সদ্যজাত স্বাগত তোমাকে।

কবি পরিচিতি

BanglaKobita

শাহ জামাল উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামে। কিশোর বয়সে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর তিনি কুষ্টিয়া শহরে লেখাপড়া করেন।

১৯৭৭ সালে দিগনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ১ম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) পাশ করেন। প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতিপয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে ( হজকিং লিম্ফোমা) আক্রান্ত হলে চিকিৎসারত অবস্থায় চাকুরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে আল্লাহর অপার মহিমায় সুস্থ হয়ে ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। মূলত তিনি কবি। কবিতা লেখা তার পেশা নয়-নেশা। বর্তমানে তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন। “ স্বপ্নের সিঁড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা ” এবং “ ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী ” তার প্রকাশিত গ্রন্থ। এছাড়াও কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশের পথে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন এবং কতিপয় সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত

ফেসবুক পেইজ

কবিতা আবৃত্তি