আত্মজ ( আকিবকে )

শাহ জামাল উদ্দিন

ঝরনা ধারার মত উচ্ছল হরিণের মত চঞ্চল
শিশিরের মত স্নিগ্ধ ঝড়ের মত রুদ্র ।

কখনো শান্ত প্রকৃতির কখনো নদী দ্রুত গতির
জানায় প্রাণের আকুতি
ভালোবাসায় ধরে রাখি ।

কখনো তারার মত ঝলমল আবার সূর্যের মত প্রখর
রঙধনুর মত রঙ তার
সে যে আমার একতারার তার ।

সিংহের মত সাহসী বাবা বলে ডাকি
তার ভেতরে আছে আমার প্রাণ পাখি
তাই তাকে দেখে রাখি ।

মনে পড়ে তাকে (বড় মামীকে)

শাহ জামাল উদ্দিন

তার সাথে দেখা করা জরুরী ছিল
চলে যাওয়ার পরে মনে পড়লো
তারপর থেকে একটা একটা পাতা ঝরছে
স্মৃতির গাছ থেকে
এ ঝরা পাতা থাকে আমার বুক স্পর্শ করে
অভিমানে অভিমানে ।

পারিবারিক রাজনীতির সমীকরণে
গিয়েছিলাম দূরে সরে শেষের দিকে
কত রাত্রিদিন তার হাতের রান্না খেয়ে
গিয়েছি বাড়ি ফিরে
অথচ কষ্টের শব্দ শুনি নাই তার কান পেতে
চলে গেলেন আমাকে কিছুটা ঋনী করে
তবুও পারিনি কাঁদতে
তিনিও পারেননি আমার ভেতরটায়
ভালোবাসা আবাদ করে যেতে।

তাকে কেবলি দেখেছি খাবার টেবিলে
খাবার দিতে
আমার উত্থানে আমার পতনে
কখনো পাইনি তাকে পাশে
তবুও তার সাথে দেখা করা জরুরী ছিল
চলে যাওয়ার পরে মনে পড়লো ।

চঞ্চল পাখি ( মাহিকে)

শাহ জামাল উদ্দিন

এসেছে নতুন শিশু চাঁদের হাসি নিয়ে
চঞ্চল পাখি হয়ে, আমার বিপন্ন ঘরে ।

সারাদিন হুল্লোড় করে
মেধার চেয়ে অধিক মেধা দিয়ে
পৃথিবী চেনায় আমাকে
সে হাসায় কাঁদায় কবিতা শেখায় ।

নিঃশব্দে দরজা খুলে বুকের ঘরে ঢুকে
পুরনো দেয়াল রঙ করে ।

সে আমার রাতের উজ্বল আতশবাজি
সে আমার হাওড়া টু চেন্নাই এক্সপ্রেস রেলগাড়ি ।

মাঝে মাঝে হাত থেকে গড়িয়ে পড়ে
আমার বুকে তার নাম লিখে-বারে বারে ।

ছোট্ট মেয়ে ( মাহিকে)

শাহ জামাল উদ্দিন

নুপুর পায়ে ঝুমুর ঝুমুর শব্দ করে
টিপ আছে তার কপাল জুড়ে কাজল কালো চোখে
চাঁদ হাসে তার সোনার মত মুখটি দেখে
সে যে আমার ছোট্ট মেয়ে ।

থাকে আমার হৃদয় জুড়ে মায়ের মত আদর করে
পাখির মত উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে
ঘর কন্যার কাজ করে ।

মজার মজার রান্না করে গাছের পাতায় মাছ বানিয়ে
বাতাসে সে মিছে মিছি আগুন জ্বালে
হলুদ মরিচ দিতে হবে তাও সে জানে ।

কলাপাতার ঘর বানিয়ে গরম গরম খাবার আনে
সে যে আমার ছোট্ট মেয়ে
দুঃখের মাঝে খুশির জোয়ার ডেকে আনে - ছোট্ট মেয়ে।

কবি পরিচিতি

BanglaKobita

শাহ জামাল উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামে। কিশোর বয়সে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর তিনি কুষ্টিয়া শহরে লেখাপড়া করেন।

১৯৭৭ সালে দিগনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ১ম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) পাশ করেন। প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতিপয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে ( হজকিং লিম্ফোমা) আক্রান্ত হলে চিকিৎসারত অবস্থায় চাকুরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে আল্লাহর অপার মহিমায় সুস্থ হয়ে ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। মূলত তিনি কবি। কবিতা লেখা তার পেশা নয়-নেশা। বর্তমানে তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন। “ স্বপ্নের সিঁড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা ” এবং “ ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী ” তার প্রকাশিত গ্রন্থ। এছাড়াও কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশের পথে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন এবং কতিপয় সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত

ফেসবুক পেইজ

কবিতা আবৃত্তি