শুধু রাত গোনে

শাহ জামাল উদ্দিন

কত রকম জীবন আছে এই পৃথিবীতে
কেউ শুধু রাত গোনে
কেউ আবার দিনের পিঠে চড়ে
বেড়ায় ঘুরে আহ্লাদে ।

কারো কাছে ব্যাগ ভরা শীততাপ
কারো পিঠে বস্তা বস্তা খরতাপ
কারো শুধু ঘাম ঝরে চুপচাপ
কেউ শুধু ইরানী আতর মাখে দিনরাত ।

কেউ করে মেজাজি আলাপ
কারো কারো নতজানু স্বাভাব
যেন রুগ্ন গোলাপ ।

কারো দিনগুলো বুদবুদ হয়ে ভাসে নর্দমায়
কারো কারো দিন সারাদিন
গোছল করে ঝরনায় ।

কারো দিন ফসল ফলায় উঁচু ক্ষেতে
কারো ফসল ফলে নীচু জমিতে
ভেসে যায় বানের পানিতে ।

একদিন ঘুমহীন রাত্রিতে
দেখে যেও আমাকে এইখানে এসে
কত রকম জীবন আছে এই পৃথিবীতে ।

অত্যাচার

শাহ জামাল উদ্দিন

কোন অমানুষের অত্যাচারে কোন নিরপরাধ উঠায়েছিল দু'হাত অন্ধকারে
সে কি তবে সিরিয়ার নিষ্পাপ শিশুটির অভিশাপ
কাশ্মীরের নাফিসা উমর বোনটির নীরব অশ্রুপাত স্রষ্টার কাছে করেছিল ফরিয়াদ
আমরা করিনি কেন প্রতিবাদ ।

ইরাক লিবিয়া ইয়েমেনের ধ্বংস্তুপের ভেতর থেকে উঠে আসা কোন বিধ্বস্ত প্রেয়সীর
মানুষের প্রতি ঘৃনার ধারাপাত
আফগানিস্তানে ফিলিস্তিনে ক্ষুধিত জানোয়ার কেড়েছে কত প্রান
তাই মানুষের বেদনার বিষবাস্পে বিষাক্ত পৃথিবীর ভেতর থেকে করোনা এসেছে
আমাদের কাঁদাতে ভালোবাসা শিখাতে ।

নির্যাতিতের অন্তরালে বেদনার কী ঝড় বয়ে যায় প্রতিদিন
স্বার্থান্ধ আমরা চোখখুলে দেখিনি কোনদিন ।

কোন অমানুষের অত্যাচারে কোন নিরপরাধ উঠায়েছিল দু'হাত অন্ধকারে ।

দেয়াল

শাহ জামাল উদ্দিন

অন্তত কিছু ভালোবাসা দিয়ে য়াও এই পৃথিবীকে
তোমায় খুজবে সে দিনেরাতে
পায়ের চিহ্ন রেখে যাবে যেখানে যেখানে
পাওয়ার শুন্য ডালা যাবে ভরে ।

দেয়াল তুলে দিলে , সুখ কি মেলে
ওপাশে দুঃখ যদি ঢেউ তোলে
ভালোবাসার কারন খুঁজে দেখ তাহলে !

সারাজীবন খেলেছ কানামাছি
পতনের শব্দ শুনতে পাওনি তুমি !

সাহসী তুমি

শাহ জামাল উদ্দিন

কত সুধা আনো তুমি কলস ভরে
ওপার থেকে
খরস্রোতা নদী পার হয়ে ।

ঝড়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
কেউ জানেনা কেমন করে
বলো থেমে যেতে সাহসের সাথে ।

বেদনার লম্বা নখ
যখন আচঁড় কাটে তোমার বুকে
তবুও হাসি ফোটে তোমার মুখে -
যখন তোমার সাদা চুল গুলো ওড়ে
ফুরফুরে বাতাসে
একটু ও ভাবো না তুমি
জীবন তোমাকে কোথায় এসেছে নিয়ে
কোন অচেনা পথে ।

আলোহীন আঁধারে পাথরের আঘাতে
একটু ও কাঁদো না তুমি যে
সরল বৃক্ষের মত উঠে যাও উপরে ।

আমি অনুভব করি তোমাকে নিবিড় ভাবে
আমার ভাবনায় আছ তুমি ডানা ছড়িয়ে
তুমি ভালো পারো সবকিছু আমার চেয়ে ।

কত সুধা আনো তুমি কলস ভরে
ওপার থেকে
খরস্রোতা নদী পার হয়ে ।

কবি পরিচিতি

BanglaKobita

শাহ জামাল উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামে। কিশোর বয়সে প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর তিনি কুষ্টিয়া শহরে লেখাপড়া করেন।

১৯৭৭ সালে দিগনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ হতে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ১ম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) পাশ করেন। প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতিপয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে ( হজকিং লিম্ফোমা) আক্রান্ত হলে চিকিৎসারত অবস্থায় চাকুরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে আল্লাহর অপার মহিমায় সুস্থ হয়ে ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। মূলত তিনি কবি। কবিতা লেখা তার পেশা নয়-নেশা। বর্তমানে তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন। “ স্বপ্নের সিঁড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা ” এবং “ ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী ” তার প্রকাশিত গ্রন্থ। এছাড়াও কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশের পথে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন এবং কতিপয় সাহিত্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত

ফেসবুক পেইজ

কবিতা আবৃত্তি