শেখ রফিক
শাহ জামাল উদ্দিন
অধিকার
------------------------------------
শাহ জামাল উদ্দিন
আকাঙ্খা নিয়ে বাঁচতে থাকা মানুষ
অপার বেদনায় আচ্ছন্ন
হয়ে থাকা মানুষ
সহজেই মরে যায় বারুদ আর বুলেটের ধোঁয়ায়
এ দেশে অধিকার হারায়
রাজপথে ফুটপাতে বারান্দায় ঘরের জানালায়
দাঁড়িয়ে যারা চেয়েছিল অধিকার
তারা হয়ে গেলো বুলেটের সহজ শিকার
তরুনেরা জাগ্রত হলে হানাদার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে
আমাদের এ শান্তিপ্রিয় দেশে
যারা হাতের মুঠোয় বয়ে বেড়াতো স্বপ্ন আর স্বাধীনতা
ওরা তাদেরই করলো লাঠিপেটা
ঘাতকেরা করছে না কোন সুযোগের হাতছাড়া
ভরছে তারা জেলখানা তবু শকুনেরা থামে না
বায়ান্ন বছরের স্বাধীনতা
আমাদের দিনগুলো নিস্ফল হয়ে গেল তুমি দেখলেনা
নিজের দেশের মাটি স্পর্শ করে বেচেঁ থাকতে
চেয়েছিল যে যুবক
তাকে মাটি চাপা দিয়ে দিলো স্বৈরশাসক
বিভ্রান্তির জটিল ভুবনে এমনই হয়
হত্যাকারীরা যখন দেশ চালায়
প্রতিবাদ প্রতিরোধ করলে
তারা লেজ গুটিয়ে পালায়।
🔎 বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্য:
🟥 প্রথম স্তবক: বেদনাময় বাস্তবতার সূচনা
> "আকাঙ্খা নিয়ে বাঁচতে থাকা মানুষ / অপার বেদনায় আচ্ছন্ন"
প্রথম দু'টি পংক্তিই কবিতার স্বর নির্ধারণ করে দেয় — এখানে মানুষ কেবল স্বপ্ন দেখে না, বরং বেঁচে থাকাটাই হয়ে ওঠে সংগ্রাম।
"বারুদ আর বুলেটের ধোঁয়ায় / এ দেশে অধিকার হারায়" — এই পংক্তিতে কবি নাগরিক অধিকারের বিনাশকে যুদ্ধক্ষেত্রের ধোঁয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এখানে যুদ্ধ হয় রাষ্ট্র আর তার নিজের নাগরিকদের মধ্যে।
🟥 দ্বিতীয় স্তবক: রাজপথে রক্তের ইতিহাস
> "দাঁড়িয়ে যারা চেয়েছিল অধিকার / তারা হয়ে গেলো বুলেটের সহজ শিকার"
কবিতার হৃদয়ে পৌঁছে যাওয়া এই লাইনগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, শ্রমিক বা সাধারণ মানুষের ওপর রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের নির্মম চিত্র। "সহজ শিকার" শব্দটি এখানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ — যেন জনগণকে গুলি করা এখন রাষ্ট্রের রুটিন অভ্যাস।
🟥 তৃতীয় স্তবক: তরুণদের ভূমিকা ও শাসকের ভীতি
> "তরুনেরা জাগ্রত হলে হানাদার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে"
এই পংক্তিতে একটি বিপরীত দৃশ্য রচিত হয়েছে — যখন তরুণেরা জাগে, তখন হানাদারদের মতোই শাসকগোষ্ঠী আতঙ্কিত হয়।
"স্বপ্ন আর স্বাধীনতা" বহনকারী তরুণদের উপর "লাঠিপেটা" — এক ভয়াবহ নিপীড়নের দৃশ্য তুলে ধরে। এটি কবির এক রাজনৈতিক চিৎকার।
🟥 চতুর্থ স্তবক: জেলখানায় ভরে ওঠা, কিন্তু প্রতিবাদ অব্যাহত
> "ভরছে তারা জেলখানা তবু শকুনেরা থামে না"
এই স্তবক রাষ্ট্রীয় দমন নীতির ধারাবাহিকতার চিত্র তুলে ধরে।
"বায়ান্ন বছরের স্বাধীনতা" আজ অর্থহীন, কবি আক্ষেপ করেন: যে দেশের জন্য আন্দোলন হয়েছিল, আজ সেখানেই বাকস্বাধীনতা গলা টিপে মারা হয়।
🟥 শেষ স্তবক: বীরদের মৃত্যু ও স্বৈরতন্ত্রের মুখোশ খোলা
> "নিজের দেশের মাটি স্পর্শ করে বেচেঁ থাকতে / চেয়েছিল যে যুবক / তাকে মাটি চাপা দিয়ে দিলো স্বৈরশাসক"
এই লাইনগুলো বিশুদ্ধ রাজনৈতিক কবিতার এক অনন্য নিদর্শন। এখানে ‘মাটি’ হয়ে ওঠে জন্মভূমির প্রতীক, আর তাকে ভালোবেসেই কেউ রাষ্ট্রীয় হিংসার শিকার হয়।
শেষে কবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বাস্তব তুলে ধরেন:
"হত্যাকারীরা যখন দেশ চালায় / প্রতিবাদ প্রতিরোধ করলে / তারা লেজ গুটিয়ে পালায়।"
এটি শেষের কাঁপুনি — ক্ষমতাসীন হিংস্ররাই সবচেয়ে ভয় পায় প্রতিবাদের।
📌 মোটামুটি সারাংশে মন্তব্য:
“অধিকার” কবিতাটি একটি অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ রাজনৈতিক উপাখ্যান — যেখানে শোষণ, নিপীড়ন, প্রতিবাদ ও বেদনার পরিপূর্ণ চিত্র আঁকা হয়েছে।
এর ভাষা সরল, কিন্তু দংশন প্রবল। অলঙ্কারের চেয়ে বাস্তবতা এখানে অনেক বেশি শক্তিশালী। কবির কণ্ঠে রয়েছে আগুনের ঝাঁজ, আবার বুকে চাপা দীর্ঘশ্বাস।
এই কবিতা শুধু একটি কাব্যিক প্রকাশ নয়, এটি সমাজচেতনার এক নির্মোহ আয়না, যা সাহসী ও দায়বদ্ধ কবির কণ্ঠে উঠে এসেছে।
শেখ রফিক এর কবিতা আলোচনা
শাহ জামাল উদ্দিন
ফটোগ্রাফী
----------------------------------------
শাহ জামাল উদ্দিন
এই যে গরীব মানুষ তোমাকে দেখলে
আমার ফটোগ্রাফীর ইচ্ছে করে
বিহ্বল জনস্রোতে এই দুর্যোগ মুহূর্তে ।
এই যেমন যখন কষ্ট আর দুর্দশা ভরা তোমার শরিরে
তখন মনে করো
আমি হাত রেখেছি তোমার কাঁধে
উপহাস উঁকি দিবে ব্যাকগ্রাউন্ডে
তখন ভীষন দাতা হয়ে কিছু মোটা চাল দিচ্ছি
তোমার হাতে তুলে
গুঞ্জন হবে মানুষের মাঝে ফটো তুলবো একসাথে ।
আবার ধরো তুমি শুয়ে আছো শীতরাতে
খালিগায়ে ফুটপাতে
আমি স্বপ্নে দেখছি মোটা কম্বল গায়ে দিয়ে
ভাড়া করা ফটোগ্রাফার ফটো তুলছে অসংখ্য রাতে
তোমার ব্যক্তিগত শীত নিবারণের জন্যে
শীতবস্ত্র তুলে দিচ্ছি তোমার হাতে
বলে দিচ্ছি ফটোগ্রাফারকে শিল্পকলা থাকে যেন ফটোগ্রাফীতে ।
আবার হয়তো কোন দিন ঠাঠা রদ্দুরে দাঁড়াবো
তোমার পাশে চৌঁচির মাঠে
আর্টিফিশিয়াল বাতাস দিয়ে ঠান্ডা করবো তোমাকে
তখন ফটো তুলবো তুমি আর আমি একসাথে ।
এই যে গরীব মানুষ তোমাকে দেখলে
আমার ফটোগ্রাফীর ইচ্ছে করে
বিহ্বল জনস্রোতে এই দুর্যোগ মুহূর্তে ।
কবিতার শুরুতেই "এই যে গরীব মানুষ তোমাকে দেখলে / আমার ফটোগ্রাফীর ইচ্ছে করে" — এই পংক্তি এক বিষণ্ন সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে: দরিদ্রতা এখানে করুণা বা সহানুভূতির উৎস নয়, বরং এক "দৃশ্যপট", এক "পোজ" — যা আত্মপ্রচারের হাতিয়ার হয়ে ওঠে।
শিল্প, ফটোগ্রাফি বা জনসেবার নামে যে লোকদেখানো মানবিকতা আজকাল সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, কবি তারই মুখোশ খুলে দিয়েছেন।
বিশেষত "উপহাস উঁকি দিবে ব্যাকগ্রাউন্ডে" — এই লাইনটি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ: সহানুভূতির আড়ালে থাকা আত্মম্ভরিতা ও উপহাসের চিত্র এতো নিপুণভাবে ধরা পড়েছে, যা সত্যিই পাঠককে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়।
কম্বল দেওয়ার দৃশ্য, শীতের রাতে ভাড়া করা ফটোগ্রাফার, আর্টিফিশিয়াল বাতাস — সবই মেটাফোর, যা বাস্তবের সঙ্গে মিলে যায়।
কবিতাটি ব্যঙ্গাত্মক হলেও এতে আছে এক বিষণ্ন বেদনা। এটি আমাদের জিজ্ঞাসা করে —
সহানুভূতি কি ফ্রেমের ভেতর বন্দী? মানুষকে কি সাহায্য করি, না নিজের ছবি ভালো দেখানোর জন্য তা করি?
"ফটোগ্রাফী" একটি সাহসী, চিন্তাশীল ও সময়োপযোগী কবিতা। এটি নিছক কবিতা নয় — এটি এক সামাজিক প্রতিবাদ, এক নিরুত্তাপ কর্পোরেট-দয়ার বিরুদ্ধে নীরব কিন্তু গম্ভীর চিৎকার।
এ ধরনের কবিতা আমাদের ভেতরের বিবেককে নাড়া দেয়।
বই আলোচনা- “ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী”
শাহ জামাল উদ্দিন
জীবন মানেই স্বপ্নময় সত্তা। স্বপ্নহীন মানুষ স্থবির, নিরুপায় মরা নদী। যার আশা নেই তার স্বপ্ন নেই, তার ভবিষ্যতও নেই। তাই মানুষ স্বপ্ন দেখে, ঘুমের স্বপ্ন, জীবনের লক্ষ্যের স্বপ্ন এবং অলীক স্বপ্ন। স্বপ্ন চাকায় ভর করে ঘড়ঘড় আওয়াজ তুলে অন্তরে লালিত কামনা বাসনা বা ইচ্ছা পূরণের পথ অম্বেষনে চলে জীবন পথিক মানুষ। এই মানুষগুলোই স্বপ্ন দেখে দেখে খুঁজে ফিরে জীবনের লক্ষ্য এবং রচনা করতে চায় বিশ্বাসের ভীত। উপলব্ধি করছি মানুষের চিন্তা ও কল্পনার জগৎ ক্রমশই সম্প্রসারিত হচ্ছে, সম্প্রসারিত হচ্ছে শিল্প-সাহিত্যের জগতও। সাহিত্য অঙ্গনে তেমনি একজন সদা হাস্য উজ্জ্বল, সমাজসংস্কারক, দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী কবি শাহ জামাল উদ্দিন। নিভৃতচারী এই কবি শাহ জামাল উদ্দিনের জন্ম ১৯৬২ সালের পহেলা জানুয়ারী। পিতা মরহুম শাহ নাসির উদ্দিন, মাতা মরহুমা আঞ্জুমনারা, এক পুত্র ও তিন কন্যার জনক। পৈত্রিক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানার অর্ন্তগত দিকনগর গ্রামে। বর্তমানে ফরিদপুর জেলা সদরের ৪০, খান বাহাদুর ইসমাইল রোড, চরকমলাপুর এ নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। ১৯৭৭ সালে এস এস সি এবং ১৯৭৯ সালে সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ ফরিদপুর থেকে এইচ, এস. সি পাশ করে ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা করে বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছেন।
২০০৫ সালে তার শরীরে হজকিং লিম্ফোমা (ক্যান্সার) ধরা পরে। তামিলনাড়–র ভেলরে চিকিৎসা করার পর মহান আল্লাহতায়ালার অশেষ মেহেরবাণীতে ২০০৬ সালে তার রোগমুক্তি হয়। এরপর নিজ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করেন এবং পাশাপাশি ১৪২০ সাল থেকে কবিতা লেখা শুরু করেন। ইতিমধ্যে তাঁর দুইটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ “স্বপ্নের সিড়ি আমার প্রথম ভালোবাসা”। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থটি “ছুয়ে দেখি ভোরের নদী”। এই কাব্যগ্রন্থে মোট ৭২টি কবিতা স্থান পেয়েছে। একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো কবিতাগুলো সব ছোট ছোট, এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করার মতো। ভাষা, উপমা কথন যে কখন পাঠককে সমাপ্তি রেখায় টেনে নিয়ে যাবে তা টেরই পাওয়া যাবে না। কবিতা ভাবনার সকল বাস্তবতা মুখোমুখি করে তিনি আদর্শ সমাজ গঠনের বাস্তব চিত্র এঁকেছেন যা অধ্যয়নের যে কোন পাঠকের মনে নতুন করে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জোগাবে। এজন্য কবিতার কিছু আংশিক পঙক্তি না লিখলেই নয়। যেমন-
“ মাঝে মাঝে মনে হয় আমি আকাশে ভূবনচিল
সকলে দেখে মধ্যআকাশে স্বপ্নে রঙিন।”
-ভুবনচিল (পৃষ্ঠা : ৭৪ )
কবি শাহ জামাল উদ্দিন বাস্তবতার কাছে বরাবরই নতজানু। তাই হয়তো তার সমস্ত কবিতায় সাবলীল ভাবেই উঠে এসেছে। সুদূর ভবিষ্যতকে বর্তমানের প্রেক্ষাপটে রূপদান করার সফল প্রয়াস।
ভেসে বেড়াই জীবন সমুদ্রে
ভাগ্যের নৌকায় চড়ে
মাঝে মাঝে ঝড় আসে ঢেউ আসে
কে যেন ভাসায়, ডুবায় এই আমাকে।
জীবনসমুদ্রে (পৃষ্ঠা : ২৫)
নিসর্গ ও মানুষের ভেতর বাহিরেও ঢুকে গেছেন কবি। তাঁর কল্পনার বিশালতা নিয়ে, স্মরণ শক্তির প্রখরতা নিয়ে, কাব্যবিলাসী শব্দচয়নের মধুরতা নিয়ে। জীবন বাস্তবতার সঙ্গে কল্পনার এমন মিলনে কবিতা হয়ে উঠেছে জীবনমুখি সময়ের দলিল।
তুমি প্রকৃতির মতো সুন্দর
তুমি নিরন্তর বয়ে চলা নদীজল
তুমি সৃষ্টির কারুকার্যে হীরের জৌলুসে করো টলমল।
-ছোট্ট পাখি (পৃষ্টা : ৪৭)
কবি তাঁর জীবনের প্রতি অপার মমত্ববোধ। এজন্য তার অধিকাংশই কবিতা দেশ, মাটি ও মানুষ সংক্রান্ত আর সুখপাঠ্য। তারই একটি চরম দৃষ্টার্ন্ত।
“ আমি ভাবলাম আমার এ হৃদয় কত বড়,
আমি দেখলাম আমার এ দেশ যত বড়।”
“ কখনো জলের ভেতর যদি
শাফলা অথবা রাজহাঁস হও তুমি
আমি ঝিলমিলে বুদ বুদ হয়ে
যাবো তোমার কাছে কতটা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ।”
-আমি যদি না আসি (পৃষ্টা : ৩৯)
এ লেখার কোন ক্লান্তি নেই, অবসন্ন হওয়ারও ফুসরতও নেই। যেমন মাটির গন্ধ খুঁজে পেতে কবি শাহ জামাল উদ্দিনের অক্লান্ত পরিশ্রম। দরদমাখানো আরেকটি কবিতার পঙক্তি। যেমন-
আমি সকাল দেখি
দেখি আলো আর অন্ধকারের মিতালী।
পাখিরা জেগে ওঠে
মাটিরও ঘুম ভাঙে
সবুজ পাতা নড়ে অকারণে।
পাতার সাথে টিয়া পাখি মিশে থাকে কামরাঙা ডালে
হরতকি আমলকি পেয়ারা গাছে
নানান পাখি ডাকে।
-সকাল দেখি ( পৃষ্টা : ৭৮)
কবি শাহ জামাল উদ্দিন সব সময় স্বপ্নচারিতায় ভেসে বেড়াতে পছন্দ করেন। আসলে এক লেখকের কাছে দেশকালের কোন সীমারেখা নেই। দেশ, দেশের মানুষ, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, ভালোবাসা তাঁর লেখার বিষয়বস্তু। সামাজিক অবক্ষয় ও তাঁর চোখ এড়ায়না। প্রতীক, চিত্রকল্পসহ বিবিধ অলঙ্কার সহজেই নজর কাড়ে। এ কবিতার একটি সুন্দর আবেগতাড়িত চয়ন।
“এখন আবার ইচ্ছে করে ঝড়ের দিনে আম কুড়াবার
মায়ের হাতের শীতের পিঠায় ভাগ বসাবার
বরই তলায় প্রেম কুড়াবার।”
“এখন আবার ইচ্ছে করে জল ছিটিয়ে মজা করার,
বর্ষা হলে ঘোলাজলে মজা করে সাঁতার কাটার
আবার তাদের প্রেমিক হবার।” (পৃষ্ঠা : ৫৮)
কবির অধিকাংশ কবিতাই জীবনের চিরচেনা, জীবনযুদ্ধের পটভূমিকে অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে। কবি শুধু তাঁর মন ও মননের দুঃখ কষ্টগুলোকে এক মুখো সূতায় গেঁথে মালা তৈরী করেছেন তাঁর লেখনীতে।
“ আমি যদি না থাকি
গিরিবাজ কবুতর আকাশে দেবে না আর ডিকবাজি
তখন কে দেবে হাততালি স্পন্দিত চোখে।
আমি যদি না থাকি
যখন পার হবে তুমি কষ্টের নদী
তখন কে হবে তোমার নৌকার মাঝি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। ”
-আমি যদি না থাকি।’(পৃষ্ঠা : ৭৬)
এমন সুন্দর কথামালা যেন উৎকৃষ্ট অনিবার্য ও অপরিহার্য। এমন সহজ সরল উচ্চারণ আর কি হতে পারে। আসলে কোন কবিতাই অ্যাবস্ট্র্যাক্ট যন্ত্রের কাছে দায়বদ্ধ নয়। সব কবিতাই উত্তাল স্রোতের মতো গতিশীল। কবিতা কখনো পাঠকে নিয়ে যায় দূরবর্তী বন্দরে, আবার ফিরিয়ে আনে তার নিজস্ব ভূবনে, নতুন আলোয়। সত্য বলতে কি মানুষকে সুন্দরের দিকে, শিল্পের দিকে, নান্দনিকতার দিকে, কল্যাণের দিকে এগিয়ে নিতে হলে প্রতিটি ক্ষণেই প্রয়োজনমুখী কর্ম করতে হয়। তেমনি কবি তার প্রাতিষ্ঠানিক কর্মের পাশাপাশি বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনে লেখালেখি করে যাচ্ছেন। তাছাড়াও কবি শাহ জামাল উদ্দিন অনলাইনে ( ফেজবুক, ফেজবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও নিজস্ব ওয়েব সাইট )
https://www.facebook.com/shahjamaluddin20?mibextid=ZbWKwL
https://www.facebook.com/kobishahjamal?mibextid=ZbWKwL
https://youtube.com/@banglakobita2024?feature=shared
http://banglakobita.org/
নিয়মিত তাঁর লেখা স্বরচিত কবিতা পোষ্ট করে যাচ্ছেন এবং বাংলাদেশের স্বনামধন্য আবৃত্তিকার বাচিক শিল্পী মাহিদুল ইসলাম, মাহী ফারহানা, শিরীন জাহান, সঙ্গিতা চৌধুরী, লাইলা মুন্নি, শারমিন তম্বীসহ আরো অনেক আবৃত্তিকার তাঁর লেখা কবিতা আবৃত্তি করে পাঠকের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। সব মিলিয়ে নির্মাণ করে যাচ্ছেন শিল্প-সাহিত্যের অবিস্মরণীয় সৌধ। আলোকময় সুন্দর ধরণী গড়ার ব্রতই কবির মুলমন্ত্র।
পরিশেষে বলতে হয়, সমকালীন বাস্তবতা, আঙ্গিকের অভিনবত্ব, কৌশলী উপস্থাপন, শব্দের গাঁথুনি ভীষণ সুন্দর হয়েছে। নিঃসন্দেহে দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। যেন কাব্যগ্রন্থটির আরেকটি বাড়তি মাত্রা যুক্ত হয়েছে। উৎসর্গ করা হয়েছে প্রিয় বোন খালেদা সিদ্দিকী নীরাকে। অপসেট কাগজে ঝকঝকে ছাপা ও বাঁধাই চমৎকার হয়েছে। সামান্য বানানের ক্রটি থাকলেও জনান্তিক প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত ৮০ পৃষ্টার এই কাব্যগ্রন্থটির মূল্য সহনীয়।
কামনা করি- কাব্য চৈতন্য-শিল্পবোধ, নন্দনতত্ব, বহুমাত্রিক উপমা, উৎপ্রেক্ষা আর স্বতন্ত্র শিল্পগুণে শাহ জামাল উদ্দিনের কাব্যগ্রন্থটি “ছুঁয়ে দেখি ভোরের নদী” আরো দ্যুতিময় হয়ে উঠুক পাঠক পাড়ায়। সৃষ্টিশীলতার নৈসর্গিক ও শৈল্পিক পাখা মেলুক পাঠকের মনে হৃদয়ে। জয় হোক তাঁর স্বপ্নের, জয় হোক তাঁর প্রতিভার, জয় হোক সকল পাঠকের। সেই সাথে কবির সুদীর্ঘ সুস্থ জীবন কামনা করি।
-মাজেদুল হক
আকাশ
তারিখ: 2024-02-11
মনোমুগ্ধকর কবিতা। অসাধারন লাগে কবিতাগুলো, প্রতিদিনের পাঠক।
শাহ জামাল উদ্দিন
তারিখ: 2024-02-11
আশাকরি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে কবিতাগুলো।
Shimul Mondol
তারিখ: 2024-02-12
অনেক সুন্দর লেগেছে কবিতাগুলো। সত্যি আপনি দারুন প্রতিভার অধিকারী। আপনার কাছ থেকে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা পেতে চাই।
মাহিদুল ইসলাম, আবৃত্তি শিল্পী
তারিখ: 2024-03-13
আমি কবি শাহ জামাল উদ্দিনের ৩০টা কবিতা আবৃত্তি করে তার সম্বন্ধে যে অভিজ্ঞতা হলো তাতে বলা যায় তিনি একজন প্রকৃতি ও প্রেমের কবি। কবিতার বিশেষ বৈশিষ্ট্য আঙ্গিকে, তাঁর সকল কবিতাই আকারে ছোট। কিন্তু গভীরতা আছে প্রতিটি কবিতায়। তাঁর কবিতা আপনাকে নষ্টালজিক করে তুলবে। আপনাকে মুহূর্তে ছুটিয়ে নিয়ে যাবে আপনার ফেলে আসা দিনের কাছে, নিসর্গের কাছে। আর খুব গভীরে পাবেন নদীর তলদেশের স্রোতধারার মতো এক নিরব বহতা প্রেম।
রুশেমা বেগম
তারিখ: 2024-03-13
শাহ্ জামাল উদ্দিন মৌলিক ভাব ও বক্তব্যের এক ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী কবি। তাঁর কবিতার ভাষা সহজ, সরল, সাবলীল, অবাধগতি। মর্মে লুকিয়ে থাকা জীবনের অগণিত বিচিত্র সব অনুভূতির স্বতঃস্ফুর্ত সহজ প্রকাশ। জন্মসীমার আলো ও অন্ধকারের নানাবিধ চিত্র, দৃশ্য সব মিলে তাঁর কবিতার শরীর। এতে শিশিরসিক্ত শিউলির সুরভিত ভালোবাসা, সুরভিত মায়াময় স্নিগ্ধতা মিশানো। কখনো আবার প্রখর উদ্যম আর মর্মস্পর্শী মনন। মেঘমেদুর আকাশের বৃষ্টির মত, সমুদ্রের তরঙ্গের কলধ্বনির মত মন মাতানো উচ্ছ্বল তাঁর ছোট্ট ছোট্ট কবিতাগুলি - পাঠক ও স্রোতার হৃদয়ে বিস্ময় জাগরুক। এমন অকপট, থরথর অশ্রুবিন্দুর মত অপরূপ সৃষ্ট তাঁর কাব্য বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবিতাকে পৌঁছে দেবে নতুন দিগন্তে।
অজানা পাঠক
তারিখ: 2025-03-26
আপনার কবিতা মানুষের হৃদয় ছুয়ে যায়, কলিজা ভেদ করে যায়। এজেন প্রাণ এ যেন নতুন এক ছোয়া। সর্ব শেষ বলি অনলাইনে আমি আপনাকে পেয়ে ধন্য। আপনি একজন জাত কবি। সালাম আপনাকে ভালোবাসা নিয়েন।
মাহমুদুল হাসান
তারিখ: 2025-06-04
সব কিছু মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ
মোঃ আমীর হোসেন সোহাগ
তারিখ: 2025-06-04
অসাধারণ কবিতার ছন্দে কোকিলকণ্ঠ মধুময় আবৃত্তি শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমিয়ে যাই,যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন আপসোস পোহাতে থাকি কেন ঘুমালাম অবেলায় কেন ঘুম আসলো কারণ তখন কবিতাটির সুর শেষ হয়ে গেছে শুনতে পারিনি অবশিষ্ট আবৃত্তি।
মো ইয়াসিন আরাফাত
তারিখ: 2025-06-04
আমি কবিতা লেখতে ভালোবাসি আমার নিজের লেখা অনেক কবিতা আছে, এখন আমি নিজেকে একজন কবি হিসেবে প্রকাশ করতে চাই
মো: রুহুলআমিন(রকি)
তারিখ: 2025-06-04
আমি একজন নতুন ক্ষুদ্র লেখক সবাই সাপোর্ট করবেন প্লিজ
আলী মোহাম্মদ মেহেদী হাসান(হৃদয়)
তারিখ: 2025-06-05
আলহামদুলিল্লাহ। সমাজের মানুষকে সচেতন করার ভালো একটি উদ্যোগ